‘এক পশলা বৃষ্টি’ পত্রিকার সংক্ষিপ্ত পাঠপ্রতিক্রিয়া: রাহেবুল

 


‘এক পশলা বৃষ্টি’ পত্রিকার সংক্ষিপ্ত পাঠপ্রতিক্রিয়া: রাহেবুল 



 ‘এক পশলা বৃষ্টি’ নামটি শুনলেই কেমন অতি রোম্যান্টিক মনেহয়। এমনিতেও ডুয়ার্সের পত্রপত্রিকায় বা সাহিত্যচর্চায় একটা মনগড়া স্থূল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে নিয়ে বারবার মাতামাতি হয়, দক্ষিণের কলিকাতাও এই ধারণাই পোষণ করে—এবং সেটা এখানকার কবি-লেখক-সম্পাদকদের প্রভাবিত করে বৈকি। কিন্তু সেইসব ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘এক পশলা বৃষ্টি’ পত্রিকা আমাদের হতাশ করে না একেবারেই। যেমন সূচিতে যা যা আছে উল্লেখ করি—প্রবন্ধ, গদ্য, গল্প, অণুগল্প, কবিতা থেকে গল্প, অনুবাদ কবিতা, কবিতা, বইপড়া, বিশেষ কলম, সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং সাক্ষাৎকার। এতগুলি বিভাগে পত্রিকাটি সুসজ্জিত, এটা নিশ্চয়ই সম্পাদকের কৃতিত্ব। তারমধ্যে দু’একটি বিভাগ উদ্ভাবনীও বটে।

প্রবন্ধ বিভাগে চারটি প্রবন্ধ আছে। বিভাগে বৈচিত্র আছে। বিশ্বজিৎ রায়ের লেখা প্রথম প্রবন্ধটি সমসাময়িক করোনা, লক ডাউন ইত্যাদি মিলে একটি আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক প্রবন্ধ। দ্বিতীয় প্রবন্ধ শুভময় সরকারের একটি তাত্ত্বিক প্রবন্ধ। বিষয় অন্তবিতর্ক, লেখকের জন্ম এবং নির্মাণ। মনোজ্ঞ আলোচনা। পরবর্তী প্রবন্ধ প্রমোদ নাথের। বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষের জীবনে ফুল কীভাবে এসেছে সে নিয়ে একটি চিত্তাকর্ষক প্রবন্ধ। পরের প্রবন্ধটি একটি একাদেমিক চর্চা গোছের প্রবন্ধ। সঞ্চিতা দাশ আলোচনা করেছেন কবি রবীন্দ্র সমসাময়িক এবং রবীন্দ্রবৃত্তের কবি প্রিয়ংবদা দেবীকে নিয়ে। অতীত চর্চার দিক থেকে লেখাটির একটি গুরুত্ব আছে বটে।

কবিতা বিভাগে প্রচুর কবিতা আছে সংখ্যাটিতে। কিছু দুর্দান্ত খুব ভালো কবিতা পড়ার সুযোগ হয়। তেমনি ভীষণ দুর্বল কিছু কবিতাও এর সঙ্গে ঢুকে আছে। মন্দের পেছনে না ছুটে ভালোর দিকে যাই—সবার শুরুতে সুজিত অধিকারীর অপ্রকাশিত দু’টি কবিতা। দু’টি কবিতাই অ-সাধারণ। এছাড়াও অনেকের কবিতা ভালো লাগে। সবার নামোল্লেখ না করে বরং ভালো লাগার দু’তিনটে কবিতা/কবিতাংশ উদ্ধৃত করি।

১.

আলো দাও, প্রেম দাও আর দাও নির্লিপ্ত বিনিময়হীন রু রু হাওয়া…

[মধুমিতা চক্রবর্তী]

২.

গল্পের নাম যারা দিল কাকড়িবাড়ি

তারা জানতেই পারলো না

এই গ্রামের সমস্ত পুকুর আজ

জাল ফেলা হয়েছে আকাশ ধরে রাখার 

[অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়]

৩.

তবু শহরেই থাকি, খুঁজি শহরের গুণাবলি

বন্ধু, অতীত মুদ্রার মতো হৃদয়জীবীরা ক্রমাগত সংখ্যালঘু

[অজিত অধিকারী]

৪.

পাগল হয়ে যাওয়া একটি দেশের ভিতর

অবরোধের কোনও সম্ভাবনা থাকে না!

[শৌভিক দে সরকার]

৫.

 ঠিক তখন আমার হৃদয়ঘরে নামাজ পড়ে কে?

[সুমন মল্লিক]

৬.

মনে পড়লেও হে প্রতিবাদ তোমাকে

মনে পড়া কি এখন আত্মহত্যার কারণ?

[মনোজ পাইন]

৭.

তোমার প্রতিটি অর্গাজমে ভাত খুঁজে বেড়ায় এক শিশু…

[সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়]

এমন আরও কিছু ভালো লাগার পঙক্তি উদ্ধৃত করা থেকে বিরত রইলাম। বিশেষ করে কিছু কবিতার পুরোটা বা পুরো একটা অনুচ্ছেদ উল্লেখ না করলে মজাটা অধরাই থাকে। একইসঙ্গে বিশ্লেষণেও গেলাম না, পাঠক তার নিজের মতন করে পাঠ নিন বরং।

গদ্য বিভাগে তিনটি গদ্য। মনোনীতা চক্রবর্তী, অনিমেষ সরকার, এবং প্রয়াত লক্ষ্মী নন্দীর। গদ্যগুলো পড়তে ভালো লাগে। গল্প আছে চারটি। তমোনাশ দে সরকার, তনুশ্রী পাল, শাঁওলি দে, রবীন বসুর। অণুগল্পের বিভাগটি আরও বড়ো মোট আটটি গল্প। অর্ণব সেন, বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়, উজ্জ্বল আচার্য, উত্তম চৌধুরী, মৌসুমী চৌধুরী, রমা কর্মকার, সঞ্জয় কুমার নাগ এবং অভিষেক মল্লিক। বলাবাহুল্য সব গল্প সমান ভালো লাগার কথা নয়। পরবর্তী পর্বটি ‘কবিতা থেকে গল্প’-এর। ব্যাপারটা বেশ অন্যরকম। জিকেল দে-এর এরকম দু’টি গল্প বর্তমান। অনুবাদ কবিতায় শুভঙ্কর পাল ও সুমন গোস্বামী অনুবাদ করেছেন যথাক্রমে ইতালিয়ান কবি গিয়াকোমো লিওপার্দি ও জাপানি কবি মাৎসুও বাশো। বাশোর একটা হাইকু পড়া যাক—

চলে যাব ঠিক

স্বপ্নেরা ঘুরবে দেখো

তেপান্তরের দিক


কবিতার পর অঞ্জনা দে ভৌমিকের কবিতার বই ‘ভেতর কথা বাহির কথা’র পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখেছেন কবি সুবীর সরকার। দ্বিতীয় পাঠপ্রতিক্রিয়াটি উদয় সাহার। শৌভিক রায়ের গল্পগ্রন্থ ‘মেঘ মেঘ বাদল বাদল’-এর এই আলোচনাটি সুবিস্তৃত। গল্পগ্রন্থটি পাঠে আগ্রহী করে তুলবে পাঠককে উদয় সাহার আলোচনা। পরবর্তী বিশেষ কলম বিভাগে কবি ও অনুবাদক বিপ্লব সরকার তার নিজের অনূদিত বই (সন্তোষ সিংহের ‘স্বপ্নের কবিতা: সূর্যের ভাষা’) এর ইংরেজি অনুবাদের গুরুত্ব আলোচনা করেছেন। পরবর্তী বিভাগ ‘সাহিত্যের আড্ডা’। আবু আরশাদ আয়ুব ‘সাহিত্য বিবর্তন’ পত্রিকাকে ঘিরে আড্ডার কথা শুনিয়েছেন। পত্রিকার সবশেষে একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার। ধূপগুড়ি হতে দীর্ঘদিন প্রকাশিত পাক্ষিক পত্রিকা ‘প্রবাহ তিস্তা-তোর্ষা’র সম্পাদক কৃষ্ণ দেবের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাবলি সূত্রধর সাহা।

১৪৮ পৃষ্ঠার পত্রিকাটির দাম মাত্র ৫০ টাকা। বিজ্ঞাপন আছে দু’একটি। ৯৩ পৃষ্ঠায় কবি শশাঙ্কশেখর পালের কবিতাটি আগের পৃষ্ঠার মাধবী দাসের কবিতার সঙ্গে মিশে গেছে বোধয়। পড়তেই পারেন পাঠক পত্রিকাটি।  

 

পত্রিকা: এক পশলা বৃষ্টি, ২০২০

সম্পাদক: অম্বরীশ ঘোষ

প্রকাশস্থান: সূর্যনগর, আলিপুরদুয়ার

সংগ্রহ: ৯৮৩২৪২০৭০৬



No comments:

Post a Comment

ইবলিশ ৭ - নিরোর নগরকীর্তন ও তাহার নাগরবৃন্দ

  শিল্পী: জস এ. স্মিথ  সম্পাদক কয়  নিরোর নগরকীর্তন ও তাহার নাগরবৃন্দ বাঁশি না বীণা না বেহালা কী বাজাতেন নিরো?—কেউ হয়তো জানে ঠিকটা। বাদ্যযন্ত...