ইলিয়াস খানের কবিতা: একবসনা নদী

 






একবসনা নদী— ভ্রমরগুঞ্জন তীর্থদর্শন: ইলিয়াস খান


জানলা এবং চারদেয়াল রঙহীন গুঞ্জন তুলে হঠাৎ হঠাৎ দূরে চলে যাচ্ছে। 

ঘরের ভিতর খয়েরি রঙের প্রজাপতি; পেটের ভিতর ও মাথার ভিতর ঘোর

রঙহীন গুঞ্জন-যেন এই সময়টা ঐকতানের মরশুম। 


টাকা এবং অর্থহীন দেনাপাওনা রুমাল উড়িয়ে মন্থর যানবাহনে চলে যাচ্ছে।

একাকিত্বের মতো হাড়বজ্জাত কিপটে, মাইরি বলছি, আর দুটো নেই। যদিও

অর্থেরও অধিক পরমাণুসচেতন নিদ্রাহীনতা। বিগত সপ্তাহখানেক স্মৃতিধর

এসে আমাকে বোকাচন্দর প্রতিপন্ন করছে, হরদম।


হাত পা, বলা ভালো, যে ঘরটাতে থাকি তার শারীরিক কাঠামো দিনকে দিন

চুপসে যাচ্ছে। ছিল কুসুমনয়না পাঁউরুটি, হয়ে গ্যালো একটা হাতঘড়ি, যার 

সময়জ্ঞান বড্ড অপরিণামদর্শী। 


পারিপার্শ্বিক সমস্ত কিছু শুকিয়ে যাচ্ছে। মাংসপিণ্ড ঝরে গিয়ে বিসর্জনের 

এক একটা বাঁশকাঠের অবয়ব আমি সুদ্ধ সমস্ত কিছু। মাঃভৈঃ— করুণ সুরে

সকাল থেকে রাতদুপুর অভয়মন্ত্রে কান ঝালাপালা। 


মাগো, আমারও সাধ ছিল প্রতিটি মরশুমি টিয়াঝাঁকের সঙ্গে সুদর্শন পাহাড়ে 

তীর্থদর্শন! 


অসাধ্য মনোবাসনা এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব—এই বাক্যে যতগুলো পদ রাখলাম

তাদের সাথে আকৈশোর ভ্রমরগুঞ্জন সখ্যতা আছে। হয়তো তুমি বালখিল্যতা

অতিক্রম করে আসলে 'আকৈশোর' শব্দটির মধ্যে টলমলে দিঘির স্থিরপ্রতিজ্ঞ 

মনোবাসনা এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব আবিষ্কার করতে পারবে। 

      

অনুসন্ধানের দুর্বার নেশা-বাস্তব আর অতিবাস্তবের সূক্ষ্ম অতীন্দ্রিয় জগত 

উন্মোচিত হয়। ঘরের ভিতর ঘর, তারও ভিতর বিসর্জনের অবয়ব—রঙিন 

মাছেদের স্নায়ুপথ বরাবর দিগ্বিদিক ছুটে যাওয়া। ঘর, বিসর্জনের অবয়ব,

রঙিন মাছেরা; খয়েরি রঙের প্রজাপতি ডাক দ্যায়—'ওগো শুনছো?'


শিমুল তুলোর আস্তরণ দূরে রেখে তার নীচে একবসনা নদী বয়ে যাচ্ছে। 

পাড় সমেত চিরহরিৎ গাছেদের উজ্জ্বল মৌন অবস্থান— একবসনা নদী, 

তোমাকে প্রায়শই দেখি পাড়ার গলিপথ প্লাবিত করে শিশুদের অবাধ্যতাকে

উৎসাহিত করছো, প্ররোচিত করছো নকল আনন্দ বাজারের ঠাটবাট এবং 

তাই দেখে লতাপাতা আঁকা করিডোর বেয়ে উজান স্রোতে ভেসে যাচ্ছে 

তরল নাতিশীতোষ্ণ প্রাণবায়ু। যেন সেয়ানা প্রেমিকের মতো অনতি-একুশ 

মেয়েটির সাথে ছুটে যেতে চাইছে অতি পরিচিত মানুষজন থেকে দূরে; 

কলঙ্কগুলো সাপ হয়ে, তক্ষক হয়ে অতর্কিত হানা দেয়; গলিপথ প্লাবিত

মৌন অবস্থানে একবসনা নদী, চিরহরিৎ পাড় সমেত।  


বৃষ্টি নামলে ধূপের গন্ধে তর্পণের সাধ জাগে। অবলীলায় বসতবাড়ি 

সুসজ্জিত জলযান। কয়েক লক্ষ মাইল উপরে পাখির চোখের মতো 

দেখা যায় অগোছালো মা কায়ক্লেশে গাছেদের পরিচর্যায় রত। সমানাধিকার

শব্দবন্ধ সংবিধান জানে আর পাড়ার গৃহস্থ-অভিজ্ঞ বটবৃক্ষ। দিনশেষের ছায়া

এগিয়ে যাওয়াই সুসজ্জিত জলযান অচিনপুরের গৃহস্থালি ভেঙে নাদান

করিডোর; নাতিশীতোষ্ণ প্রাণবায়ু অমল বিজয়োৎসবে ছুটে যেতে চাইছে

সেয়ানা প্রেমিকের মতো; অনতি-একুশ মেয়েটির হাতে আজন্ম-সঞ্চিত

মনোবাসনা; চিরহরিৎ গাছ পরিব্যাপ্ত নদী, জানলা দরজা; অবগাহনে সন্ত

পরিভ্রমণ। 


1 comment:

  1. লিরিক্যালি ভীষণ সমৃদ্ধ একটি কবিতা।

    ReplyDelete

ইবলিশ ৭ - নিরোর নগরকীর্তন ও তাহার নাগরবৃন্দ

  শিল্পী: জস এ. স্মিথ  সম্পাদক কয়  নিরোর নগরকীর্তন ও তাহার নাগরবৃন্দ বাঁশি না বীণা না বেহালা কী বাজাতেন নিরো?—কেউ হয়তো জানে ঠিকটা। বাদ্যযন্ত...