স্বরলিপি: সোমনাথ বেনিয়ার গদ্য
প্রিয় সা
কত আর সাবধানে থাকবে।
"Where
there is a fire, there is a smoke." যেদিকে তাকাও না কেনো
সাধারণ ভিতরে-ভিতরে অসাধারণ হয়ে উঠছে নাভিশ্বাসের দু-এক চরণ পঙ্ক্তিমালায়। কার
জন্য এই নাভিশ্বাস উঠছে সেসব জানতে গেলে শিরদাঁড়া পুঁইশাক হয়ে যাবে।
আত্মনির্ভরতায় উঠে দাঁড়াতে না পারলেও গুটি বসন্তের মতোন অসংখ্য টসটসে মেটুলি
উপছে পড়বে। তারপর বাড়ির কর্তার হাতে থাকা ভোরের সেতার থেমে যাবে, আঙুলের চলন বন্ধ হয়ে গিয়ে নাকের সেন্সরটি জেগে উঠবে। কড়াইয়ে ছোটো
মাছের সঙ্গে সেই মেটুলি সহমরণে যাবে। দুপুরের পাতে এক তাল পড়লে "Our
sweetest songs are those that tell of saddest thought" ভুলে
চোখে নামিয়ে দেবে অজগরের স্বভাব। পেটে চাপ তো চোখে চাপ। এই চাপাচাপির জীবনে
হারিয়ে যাবে অসতর্কতার চিহ্নমালা। তখন আবার সাবধানে পদক্ষেপ ফেললেও পায়ের তলায়
থাকবে চন্দন সাবান যা সুরভিত গন্ধের সঙ্গে মৌলিক পিচ্ছিলতার বাতাবরণে মেরুদন্ডে
রাখবে চিত হয়ে পড়ে যাওয়ার অনুরণন ...
প্রিয় রে
একী কোনো ডাক! তবে
কার ডাক?
কোন কারণের ডাক? কোথাও কি তবে আগুন লেগেছে!
কোথাও কি তবে ভীষণ হুটোপুটি, কোলাহল, আর্তনাদ
কিংবা নাদের ভিতর তৈরি হচ্ছে ধ্বংসবাদের উপাসনালয়? সেখানে
দেবতা কে? কী তার পরিচয়? কোন অধিকারে
সে দেবতা! দেবতা যদি ভক্তের জন্য ব্যাকুল থাকে, তবে তার জীবন
রক্ষার জন্য পথের ধারে এত ঘন ঘন প্রণামির বাক্স রাখার অর্থ কী! অর্থ অনর্থের মূল
জেনেও ইউক্যালিপটাস গাছের মতোন গজিয়ে উঠবে মিথ্যাচার আর শোষণ করে নেবে মাটি ওরফে
মানুষের সমস্ত ঔরস। মানতে চাইবে না "There is only one happiness in
this life, to love and be loved" কথা বিষয়ক সমস্ত রচনা।
তাহলে কি সেই ডাকের মধ্যে আন্তরিক আহ্বান নেই? সবুজ হাতছানি
নেই? এক পোঁটলা ধূসর নিয়ে এই ছায়াপথের ধূসরতা আরও বাড়ানোর
মধ্যে কোনো ক্রেডিট নেই। তবে ঐশী ক্রেডিট কার্ড থাকলে দেনদার হও নিজের হৃদয়ের
কাছে যেখানে গাঁইতির এক গুঁতোয় ঝনঝন করতে পারে গুপ্তধনের কলসি। নিজে কিছু রেখে
বাকিটা বিলিয়ে দাও এই প্রেমহীনতার সংসারে। তখন সবাই প্রিয় রে! রে শব্দে ছুটে
আসবে উষ্ণ চুম্বন, ক্লোজ আপ হাসি, ফেবিকুইকের
সম্পর্ক ...
প্রিয় গা
অসভ্যতামির কিছু নেই।
কিছু নেই ঘৃণার। রাজা উদাস থাকলে সভা-পারিষদও উদাস থাকবে। আসলে চিরকালই সুবিধাবাদ, জিন্দাবাদ! কার কী হলো জানার দরকার নেই। নিজেরটা গুছিয়ে নিয়ে থাকতে পারলে
মার্কশিটে লেখা থাকবে গ্রেড এ প্লাস প্লাস। কারোর গাত্রদাহ হলে করার কিছু নেই। এই
বিষয়ে কারোর সংবেদনশীল অঞ্চলে সুড়সুড়ি লাগলে সেক্ষেত্রেও কিছু করার থাকবে না।
বরং একটা নাক সিঁটকানো ব্যাপার-স্যাপার সর্বাঙ্গে কাঁটা তুলে দিয়ে যাবে। ভুলে
যেতে হবে "The hardest thing in life is to forgive. But hate is
self-destructive. If you hate somebody you're not hurting the person you hate,
you're hurting yourself. Forgiveness is healing." ক্ষমাসুন্দর
দৃষ্টি তখন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। কোথাও দাউ দাউ দেখলে শরীরের পঞ্চেন্দ্রিয়ের শেষ
ইন্দ্রিয় গরম হয়ে ওঠে। বাঁচাও বলে দৌড়ালেও কেউ গা দেবে না ওরফে আমুল দেবে না।
যেখানে স্বভাব দগ্ধ মাংস খাওয়া সামান্য নুন ছিটিয়ে সেখানে ভীতিজনক ইচ্ছার
অনির্বাণ শিখা অটোমেটিক্যালি জ্বলে ওঠে। যদিও-বা নিবারিত শিখা অস্তমিত হয়
কোনোভাবে, হয়ে যায় অস্তিত্বের সর্বনাশ। তখন কে কার?
দার্শনিকভাবে ভাবের ভাবশিষ্য হয়ে কদমগাছের তলায় ছাই মেখে সাধুর
প্রবচন নিয়ে বাকি জীবনের কাছে ঋণী থেকে পুনর্জন্মের মোহের খাতায় কাটাকুটি খেলা
খেলতে থাকা ...
প্রিয় মা
"জানবে
কেউ না থাক, তোমার একজন মা আছেন। আমি মা থাকতে ভয় কি?"
এই আশ্বাসবাণীতে বন্ধুর পথ সুগম্য হয়ে ওঠে। তখন নির্দিষ্ট গন্তব্য
ছেড়ে দূর আরও দূরে চলে যেতে কোনো ভয়, আড়ষ্টতা বা কষ্ট
কিছুই থাকে না। এই অভয়বাণী মনের ডগায় রেখে সমস্ত দ্রোহকালের মগডালে চেপে
অনায়াসে দোল খাওয়া যায়। কে নেবে ভয়? সমর্পণ হয়ে গেছে ওই
ডাকে। এখন হাজার বস্তি পুড়ে খাক হয়ে গেলেও চোখের তপ্ত জলে আশার হিমশৈল ভাসে।
শুধু ধরে রাখতে হবে। এটা ঠিক যে তখন রাজা মিথ্যা, রাষ্ট্র
মিথ্যা কিন্তু ওই ডাকেই তো হৃদয়পুরে ডোবার জলে পদ্ম ফোটে। ত্যাগও এক ধরণের ভোগ।
নিজেকে আনন্দ দেওয়া। নিয়ে নাও, সব নিয়ে নাও। ফেলে দাও
এঁটোকাঁটা। খেয়ে বাঁচি। যদি বাঁচায় কেউ, তবে মারবে কে?
মত্ত উল্লাসে নাগরগণ যতই উল্লাস করুক, লুটেপুটে
খাক না কেন, পুনশ্চে রয়েছে চোরের সাত দিন আর গৃহস্থের এক।
পালাবে কোথায়? তরঙ্গের বাউন্ডারি চারিদকে ছড়িয়ে আছে। VIBGYOR
দাঁত কেলিয়ে আকাশে উঠবে নির্মল বৃষ্টির পর। তখন খুশি তো। হতেই হবে
কারণ "A mother's love endures through all", অন্যদিকে
"Motherhood is the greatest thing and the hardest thing." এ দেওয়াল সে দেওয়াল নয়। এ দেওয়াল কোল ওরফে ল্যাপ। পিঠ ঠেকে গেলে
নিরাপদে আছো ধরেই নিতে পারো। কচি কচি হাতে তুলতুলে স্পর্শ সেই ধ্বনির মায়াবী
চ্যানেলে ধরে এগিয়ে আসবে। মিছিমিছি কানামাছি খেলায় খেলতে-খেলতে ভুলে থাকতে হবে
সোনালি ফসলের ঘ্রাণ সত্য নয়। মেঠোপথের ধুলো মানবিক নয়। মা মানে মাটি কেননা
"Always my mother, forever my friend."
প্রিয় পা
পা ওরফে আদুরে ডাকে
বাবা যার উপর নির্ভর করে সাধারণত আত্মনির্ভর হওয়ার প্রকল্প চালু হয় কিন্তু
শেষমেশ "I have done everything that I should, but the outcome is
in the hand of fortune." পায়ে-পায়ে এগিয়ে যাওয়া সাফল্যের
দিকে। আসতেও পারে, নাও পারে। কিন্তু নিরন্তর কাকের মতোন
চেষ্টায় গৃহস্থের মাছের থালা থেকে কলপাড়ে একটা-দুটাে ছোঁয়ের আন্তরিকতায় মাছের
পেটি উড়ে যেতে পারে। মোট কথা I am in the queue. লাইন থেকে
সরলে চলবে না। নিদেনপক্ষে থুতু ফেলে জোরালো আঠায় সারমর্ম নিয়ে লাইন দিয়ে রাখতে
হবে কারণ "You know what my needs are. Let us see to it that no one
possess anything." ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দে মা লুটেপুটে খাই। রাষ্ট্র
যখন কোমর ভেঙে দেয় তখন শরীরের ভিতর সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকেলের পামতেলে
হাবুডুবু খেতে-খেতে ফুলুরির মতোন ভেসে থাকে। জোড়া-জোড়া পা। মুখে মধুর কচকচানি।
টপাটপ উড়ে যাচ্ছে গরম-গরম। আত্মনির্ভরতার সঠিক ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে তখন
অভিধানের স্পাইনের সুতো খুলে যাবে। ন্যাংটো হয়ে পৃষ্ঠা ছড়িয়ে পড়বে চারিদিকে।
হাততালি দিতে-দিতে বিড়ি ধরানোর অছিলায় কেউ দেশলাইয়ের বারুদ ছুঁড়ে দিলে দাবানলের
মিনিয়েচার তৈরি হবে। তখন কে বলবে বলো, হাঁটি হাঁটি পা পা,
যাকে পাবি তাকে খা ...
প্রিয় ধা
ধামাচাপা দিয়ে কী হবে? সেই তো কচ্ছপ! মুণ্ডু বার করতেই হবে। তখন "Failure is the
pillar of success" বলে গোরিলার মতোন বুকে হাত ঠুকে বলবে,
"ওরম হয়েই থাকে!" কিন্তু বিষয়টি সহজ নয়। লুকোচুরি
খেলায় ধাপ্পা দেওয়ার মতোন মন না পেলে খেলে আরাম নেই। ধাপ্পা খেলেই না তবে হুঁশ
ফিরবে। তখন শুধু মানটুকু থাকলেই হলো। মানুষ হয়ে এটিকেট রক্ষার জন্য মঁসিয়ে এবং
মাদমোয়াজেল বললেই হলো। মুখে একটা দেঁতো হাসি থাকলেই চলবে। সেই হাসিতে কত ধাঁধা
লুকিয়ে থাকবে কে জানে? যে জানে সে বলবে অল কোয়ায়েট ইন দ্য
ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট। ফ্রন্ট আর ফন্ট গুলিয়ে ফেললে চলবে না। একটা যুদ্ধের ক্ষেত্রফল
আর একটা বিভিন্ন সাইজের হরফের শবদেহ। লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচাতে চাই। যে বাঁচাবে সে নিজেই বাঁচার জন্য স্লোগান
দিতে-দিতে কোনো শহীদ বেদীর সামনে গিয়ে হাঁপিয়ে বলবে, "ওরে পটলা একটা চা দে। সঙ্গে লেড়ো বিস্কুট।" এই ফ্রি ফ্লোইং
অগ্রগতিতে আলটিমেটলি কার প্রগতি হবে দেশ জানে না। তবে গতি একটা আছে ভেবে সোনার
হরিণের জন্য লালায়িত হয়ে থাকতে হবে। ওটা যে মায়াবী ভেকধারী মারিচ বুঝতে পারলে
সবটা ভুলে থাকতে হবে। চোখে-মুখে জোরালো আলো পড়লে যা হয় আর কী! জলের ছিটে দিতেই
তালপুকুরে ঢুপ করে কিছু পড়ার শব্দ হবে। প্রচ্ছদে দেখা যাবে কলসি গলায় দিয়ে একটা
মেয়ের শুকনো মুখের আদল। খুব ভালো ছবি! জাতীয় পুরস্কার নিতে গিয়ে পকেটের আধ পোড়া
বিড়ি আগুন লাগার ভয়ে গুটিয়ে থাকবে ...
প্রিয় নি
নেই! এই নেই-নেই করে
ইতিতে nothing
রেখে বলবে সবই শূন্য। ফাঁকা গোল। ফাঁকা মাঠ। ফাঁকা গোলপোস্ট।
সামনে-পিছনে যে দিক দিয়ে পারো গোল দাও। গোল সে তো গোল! যেখানে শুরু সেখানে শেষ।
এই ভাব নিয়ে ভাবান্তরবাদে বিশ্বাস রেখে মানুষের মনে-মনে ঘুরে বেড়াতে হবে। কিন্তু
মনে রাখতে হবে "But if thought corrupts language, language can also
corrupt thought." তাই ভাবনার মধ্যে পজেটিভ থিংক আনতে হবে। সব
জায়গায় একটা করে প্লাস সাইন জোর করে গুঁজে দিতে হবে। এই গোঁজামিলের জীবনে ওটুকু
মানতে কারোর অসুবিধা হবে না। আসলে সবাই বিশ্বাস করে "The most
courageous act is still to think for yourself." মা আমি
রসেবশে থাকতে চাই। কোন রস রে? প্রেমরস! প্রেমসুধা! আজকাল
আবার এগুলো দুর্লভ। সব কামরস হয়ে গেছে। কামরাঙায় কামড় দিলে টক স্বাদ যেরকম মুখ
ভর্তি লালা আর রসের সঙ্গমে তৃপ্ত হয়, সেরকম সবটাই তালেগোলে
পারফেক্ট প্যাশানের উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। ণত্ব-ষত্ব বিধান মেনে প্রিয়তমার নাকের
দুলে আলতো টোকা মেরে নিজেকে নিরো ভেবে চাঁদের আলোয় বেহালা বাজাবে আর কামের আগুনে
পুড়ে যাবে বাৎস্যায়ন। ভোরের শুরুতে দু-হাতের শিশির ভেজা শিউলি যার কমলা বোঁটায়
ঈশ্বরের দাঁতের চিহ্ন কামড়ে খাওয়ার পরামর্শ জোগান দিতে চাইছে। চলো, তুমি ঠিক তো আমি ঠিক। আমি ঠিক তো জগৎ ঠিক ...
No comments:
Post a Comment