ইনক্লাইন: হিরণ্ময় গঙ্গোপাধ্যায়
তখন
চাঁদ উঠছিল খোসা ছাড়ানো নতুন গোলাক্কু আলুটির রঙেঢঙে। ঊষাগ্রামে তখন ঘোরতর বিজলি
ফুটুস। সুতরাং একা অন্ধকার;
ছেতরে-ফিতরে পড়ে আছে সাবেক
জিটি রোডে। সেইরকম একটি চাঁদেড়ু আলোছায়ায় পা চালিয়ে চার লাফান্ডুর নেতামতনটি
চিল্লায়: হরবকত্ বকিস না ত! সাইলেন থাক্। চাঁদ দ্যাখ। অতএব তিনজনেই চাঁদে।
পাতলা-দুবলামতনটি
চাঁদ না দেখা বেঁটেমতনটির পিঠে থাবড়া বসায় : শালার বাতবাতিয়া দেখ! উঠতি মাগির
মতন ফড়রফড়র! পাউস লাগেছে। সেই সময় হড়াং করে লাচতে লাচতে মালগাড়িটা রেলপাটরির
বাঁয়ে সিঁদুর টিপ মেরে হাওয়া হয়ে গেল। ওরা পাথরে-লাইনে-সিলিতে গড়াগড়ি কয়লা
তুলে বস্তায় ঢোকায়; রশি বাঁধে, কাঁধে
তোলার আগে বিড়িও ধরায় তারপরই সবুজ টিপটি ছিনাল হাসে। মাতাল এক্সপ্রেস আপ-লাইনে
ঝাঁইঝাঁই সিধা ঢুকে লাল করে দিয়ে হাওয়া হয়ে গেল। বস্তাগুলো লাইন পেরিয়ে
রেল-খুঁটার ওপারে রেখে কাজ খুচলিয়ে কয়লা পাথর যা পায় চুনাচুনিতে; ডাউন লাইনে ফির মালগাড়ি হড়াংহড়াং। হাবড়া-আসানসোল
রেলপাটরিতে বেতাহাসা হুড়াহুড়ি হড়হড়ি,
রেলের। চাঁদের দিকে তাকিয়ে
তাই চারেই। এমন রেল-মালের হুড়াহুড়িতে কিছুই করার থাকে না, তা তুমি যতবড়ো কর্মিষ্ঠই হও। এই রকম একটি চাঁদেড়ু
আলোছায়ায় তারা রোমান্টিক হয়,
উদাত্ত গান রেলের হড়হড়ি
ছাপিয়ে একে অপরের কানে ঢালে,
কেউ কেউ উদোম খিস্তি ঝাড়ে, কারও রেতঃপাত হয়,
কেউ কিছু না ত মোতে ছুটন্ত
মালগাড়িতে। সে মুতের ফোয়ারায় চাঁদের ছিরিবিরি, চাঁদের
লবেজান। দেখাদেখি বাকি তিনজন। মুতের আনন্দে নেতামতনটি বলে : বল লফরা, আসানসোল ঝপাঝপ টেউন হয়ে যাচ্ছে, কি সাবুদ?
কি দেখে বুঝছিস, বল?
শালাদের
মুত বন্ধের জোগাড়। ক্যালাও বেরেন নাই তুদের। একদম ইজি কস্টান ইজি এনসার,! চাঁদেড়ু আলোতেও স্পষ্ট দাঁতে হাসির ফক্কড়ি : সাবেক মুতের
জায়গাগুলায় গিরিল বসাই পারক (পার্ক) হচ্ছে,
বুঝলি? মুতবি ত রুপিয়া ফেকে মুত! দুদিন পর থুকবারও পেলেস পাবি
নাই।
লম্বামতনটি
মুত-সাঙ্গ ল্যাবড়া নাচায় ঠোঁটের মুত-বুঁদ ফেলতে : লুলাদ্দা তুঁই এঁড়ের গ্যাদে
দিমাকদার! সহিমে, রেলপাটরি ছাড়া মুতবার পেলেস নাই!
জটলাগা
জিপার, তবুও টানা হলে পাতলাদুবলাটি ফুক্ করে হাসে: কি
পালিশমারা মুত-ঘর রে ভাই,
মুততে গেলছিলম একদিন। মুত
শালা ডরেই নুনুর ভেতর ঢুকে গেল!
---সচ্ বাত। অমন চমকিলা ঘরে মুত হয়?
---ভাতের থালে কি হাগা যায়?
লুলা
পিঠে থাবড়া বসায় : ছুরকি মুতা শালা,
মুত্! আভি কয়লা বরা উঠাবি
আর ছুরুক্ করে প্যান ভিজাবি!
মালগাড়িটা
রেলপাটরি ফাঁকা করলে বাকি কয়লা ওপারে,
ঠেলায় লোড করে, প্যাডেল মারে লফর,
মড়িরাম আর গুজ্যা
ঠ্যালে---খুব আপে লুলাও হাত লাগায়। মদে তাগদ বাড়ে, কমেও।
চার
লাফান্ডু কোথা থেকে এলো কোথায় যাবে জেনে কাজ নেই, ঠিকঠাহর
ওদেরও নেই সহিসলামত। আনাযানার হুঁসদিশা রেখেই বা কি লাভ? এক ঠেলা,
না হয় একটু বেশিই ওভার-লোড, ওয়াগেনের কয়লা চুরিয়ে বেফিকির বেচতে চললো, এটুকু জানাই যথেষ্ট। রেলের বড়ো বড়ো চুরি সহ্যর আদত---এক
ঠেলাতে রেলের ছেঁড়া যায় না কিছুই,
তবুও এক রেলপুলিশ ঠেলার মুখে
এসে দাঁড়ায় : রুপিয়া দো!
---যাঃ! ফোট!
---রেলের কয়লা থোড়াই? লুলা জোরসে ঠেলা মারে ঠেলায়।
---হামলোক স্টেটের রোড মে।
---ক্যা সাবুদ ই রেলকা কয়লা? লফরাও জোর প্যাডেল মারে।
---আগলা দিন আও কুত্তারা... সাবুদ মিলা দেঙ্গে।
লুলা
ক্যাৎ করে লাথ হাঁকায় পাছায় : রেল তেরা বাপকা?
---আও লাইন পর, আও...
দেখো রেল কিসকা?
---তোহরা নোকরি না খায় ত মেরা নাম লুল্লা নেহি।
---তেরা সব ভিডিও রাখেছি, লফরা চিল্লায়। শালা ঘুষ খাও আর বিচি খুচলাও, শুনাই দুব রেল আপিসে,
রুকো!
ও
সব শোরসরাবা রেলপাটরির লানতভরি গুড়গড়াহট। কোথাও না কোথাও রোজের ডেলি হরবকত্।
রেলকে ধরেই আসানসোল। রেলই লুলাদের ভাতঘর,
অনিঃশেষ তার ভান্ডার, বৈচিত্র্যময়। কোলিয়ারি খতম কারখানা মায়ের ভোগে। খাদান
সিন্ডিকেটের হাতে। অবস্থা বদলে গেলে কিম্বা না গেলেও যাদের ছেঁড়া যায় না কিছুই, চার লাফান্ডু সেই দলেরই; হারাবারও
কিছু নাই পাওয়ারও কিছু নাই। সাউথ থানা দুরদুর করে ভাগায় : কিচ্চড়গুলা কিচাইন
করতে এল! দু ডান্ডা পাছায় বসিয়ে বড়বাবু লাথ মারেন, ভাগ!শালাদের ফিচায় মাংসটাও নাই, লাথ মারাই বেকার!
এইসব
লইয়াই বহু অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ তক্ এখন এএমসি অর্থাৎ আসানসোল মিউনিসিপ্যাল
কর্পোরেশন। ফলত প্রকৃতিসর্বস্ব। জিটি রোডের দুই পারে হোটেল, নির্মিত-নির্মিয়মান ফ্ল্যাট, ভদ্রাসনসহ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিক্ষিপ্ত জনপদ, মধ্যে রৌদ্রদগ্ধ ও জ্যোৎস্নাপ্লুত ঝোপজঙ্গল। এমনই একটি
জঙ্গলসম পুটুসকুঞ্জে ঠেলা থামিয়ে মালখালাস করে চার মুতুড়ে ফির মূত্রত্যাগে। ভরা
কলসির ঠমকে অতঃপর যার একপাশে ননিয়া নদী তার সিথানে সুবিস্তৃত সবজিক্ষেত্র অপর
পাশে খাঁ খাঁ কিছু পুটুসঝোপ তারপর একটি ছবিলা ছবিলা গ্রাম নিয়ে ফাটাফাটি নেচারাল
ভিউয়ে বাংলো প্যাটার্নের নির্মাণসাঙ্গ বাড়িটিতে তেইশ ডিগ্রি সাতষট্টি মিনিট
চৌষট্টি সেকেন্ড উত্তর ও সাতাশি ডিগ্রি ঊনত্রিশ মিনিট আঠারো সেকেন্ড পূর্বে পাতা
যে-আসে-সেই-বসে সোফায় পাছা ঠেকায় চা খায় বিস্কুট মতন গোলাকৃতি আয়তাকার
বর্গক্ষেত্র বস্তু কামড়ায় কুত্তা বাউয়ালি করে এবং নিজেরাই গা তোলে।
---দশটা মইনিং সার, পাক্কা। ইয়াদ দিলম।
গৃহকর্ত্রী
পর্দা সরায় অ তুমরা? আমি ভাবি নতুন কেউ?
---খাদান ন ইনকেলানি? গৃহকর্তা গৃহকর্ত্রীকে খারাখারি বললেন, কেরিয়ার তৈরির সময় এরম্ ঘটে থাকে। লুলাকে বললেন, ইনক্লাইন। খাদানের কাজ শেষ। গা তুলে বাগানের গেটে প্রায়
বেরিয়ে যাওয়া লুলাদের ডাকেন কর্তা : তোমার চেলারা ভালো, তবে তুমি একাই এসো,
কাজে সুবিধা, ঠিক ত?
লুলা পড়তে জানেনা বলেই রোজের মতো আজও মার্বেল
পাথরে খোদাই করা নেমপ্লেটটির দিকে তাকায় এবং নমস্কার করে মাথায় ঠেকায়। এরকম
শিলালিপি শহরের যত্রতত্র,
ঘাঘরবুড়িতে পথে-দেওয়ালে।
পুন্যাত্মা ও ক্ষমতাত্মাদের লুলারা সম্মান করতে জানে, শিলালিপি তাঁহাদেরই কীর্তি। ইঁহারা কেউ মন্ত্রী মেয়র
এমেলে এমপি এবং অথবা দানবীর।
শিলালিপি
অনুসারে গৃহকর্তার নাম ড মনোতোষ সেন,
নিশ্চয় তস্যপত্নী শ্রীমতী
বিশাখা সেন তাঁর নিচেই---তারপর আর কোনো নাম নেই। বিশাখায় বন্ধ্যানারীর লক্ষণও
নাই, ঘরে লেন্ডিপেন্ডিও নাই, লুলার বাতচিতে তিন লাফান্ডু জানে ইনি 'সার'। লুলাও জানে গৃহীনির ডাকাডাকিতে। শিচ্ছিত
রুপয়াঅলা বিবিদের আদত ভাতারের নাম ধরে ডাকা,
গৃহকর্ত্রী কর্তাকে সার বলেই
পুকারে। কয়লা খাদান নিয়ে মোটা কিতাব লেখার সুবাদে লুলাকে তখন তাঁর চাই। লুলা
গাইড।
তখন
এই বাড়িটাই নির্মিয়মান।ধুপসিরোদে,
কী-কী মাল হাপিস করা যায়
সরজমিনে দেখতে এসে শতকরা নব্বই জন ঠিক শহরে-বাস-না-করা মানুষ যেমনটি পরোপকারী হয়, একটি যুবক,
পাঁজার ইট তুলে মণিমানিক্য
দেখার ডিপ-দৃষ্টিতে দেখে ইটাওয়ালাকে শুধায় : কার ভাটার? মঙ্গলার?
---হুঁ
---ভোসড়িবালা! একটু হলেই ইটাওলাকে হিট করতো ইট
এমন ছোঁড়ে। যেন ফেটেই গেছে এমন কেৎরে মাথায় হাত শালার। লুলা থেটনিং মারে, চিটিং কচ্ছিস?
বাংলাভাটায় গাঁথে দিছিস
বাবুর ঘর? সাজানো ইট ডালায় উঠলো। ঘন্টা খানেক বাদে নতুন
ইট এলো সিঁদুরপানা সব্বাঙ্গে নাড়িছেঁড়া ছাই। যুবকটিকে অনুরোধ করেন ড সেন :
কোথায় থাকো, কালিপাহাড়িতে? দেখাশোনা
করবে? হাজরি নেবে।
---আমার বহোত সারে ডিবটি....
---কোলিয়ারিতে?
---না। রেলে, খাদানে, ই টেনে...
---খাদানে?
ড সেন যেন খাজানা পেয়ে
গেলেন : আরে তোমাকেই ত খুঁজছি। খাদান দেখাতে পারবে? নামাতে?
সেই
যুবকটিই লুলা। বাপ একদা নাম দিয়েছিল লালমোহন। ভোটার লিস্টে লুলা বাউরি, পিং গেঁদু। আপাতত পোস্ট ডক্টরাল থিসিসের গাইড।
রৌদ্রবিম্বিত
আঙিনায় এখন ড সেন বসে, বিস্মিত ও বিরক্ত, ফলত বিব্রত। তিনি,
কোলে পড়ে-থাকা আজকের কাগজ, দেখছেন না;
মোবাইলে পুড়ুংপুড়ুং মেসেজ
আসছে, পড়ছেন না; বাঁ
হাতটা চেয়ারের হাতলে না-ধরানো সিগারেট ঠুকছেন, ধরাচ্ছেন
না; হাতলে চায়ের কাপ তাতে সর তাতে সূক্ষ্ম একাধিক
কীট, চা পান করছেন না। এমনি একটি সংস্থানে শুশুনি
শাক বাছতে বসা টুনিই সব লন্ডভন্ড করে দিল। শুশুনি শাকের সম্মুখে দুটি পা ফাঁক
পিঁড়ির ওপর ভারি পাছা ফেলে পঁচা ও হলুদ পাতা চুনাচুনিতে টুনি, ভরাট পিঠ ব্লাউজ-ফোড় ভারতীয় ভাস্কর্য। পার্ক না, সাক্ষাৎ বনগহন মৃগয়াক্ষেত্র। গৃহকর্ত্রীও কোনারকে, সারকে বললেন,
যাও ভেতরে, রোদটায় কি করছ! শোও গা। সারারাত ঘুমোও নি।
--যাই যাই..
সারের
চোখে এখন পাতা জোড়া কয়লামন্ত্রকের বিজ্ঞাপন 'খনন
প্রহরী', কোল ইন্ডিয়ার নিজস্ব অ্যাপ। ইললিগাল মাইনসকেcrub করার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ। অবৈধ খাদান সম্পর্কে কিছু
জানা থাকলে জানাতে পারেন,
তথ্যদাতার পরিচয় 'not to be revealed'। কয়লামন্ত্রির
চিন্তাতুর আলোকচিত্রের ঠিক ওপরে হাস্যময় প্রধানমন্ত্রি। কালিপাহাড়ির যত্রতত্র
কয়লাখাদান, কয়লামন্ত্রি জানেন না এজেন্ট ম্যানেজার জানেন
না জেনে অযাচিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কী নির্মল ব্যঙ্গাত্মকহাসি। দেশের কত সমস্যা আর
একটি মাত্র প্রধানমন্ত্রী! প্রথম পাতায় মোটা হরফে লেখা ভারতের মুসলিম জনগণ
সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নিয়েছে অর্থাৎ স্যার ভাবছেন বাবরি মসজিদ মোটমাট দুবার
ভাঙা হলো। হেডলাইন দেখে সার-গৃহীনি বললেন যাক্ বাব্বা! পাঁচশ বছরের ডিসপিউট মিটলো।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন,
কে বলল বৃষ্টি কমে গেছে? বেশ তো ঝরছে বাবা। কখনো আইলা কখনো বুলবুল। বৃষ্টির কী
বাহারি নাম। অত আদুরে নাম বাচ্চারও রাখতে পারিনি।
---বৃষ্টি না, এসব
সাইক্লোনের নাম। অনেক লোক মারা গেছে।
---লোক ত মরেই। সাইক্লোন ছাড়াও মরে।
সোনার
চাঁদের মতো রোদ হামাচ্ছে গ্রিল পেরিয়ে,
স্লেট বসানো লনে। সারের
হাতের ছায়া টুনির স্তন আঁকড়ে : অত ভেবে ব্রেন বরবাদ ঠিক না, যাও,
ওঠো!
না
ঘুমোনোর সমস্যাটা টুনিকে বলেছিলেন,
ওই কিছু একটা বলতে হয়, হাতের কাছে আছে টুনিকে; টুনি
আরও সমব্যথী : আজিম ডাক্তার খুব ভালো নিদের দাবাই দেই ম্যাটাম, ডাঁড়াও দুপহরে আনে দুব।
---ঘুমের ওষুধ ঘরে আছে, ঘুম হয়ত হোত,
ওনার যে হাটের পোবলেম।
---ত ম্যাটাম্, শুশুনি
শাকের রস পিলাও গ্যাদে নিদায়,
লিয়ে আসব?
---আন তবে। সারকে শুধায় : হার্বের সাইড ইফেক্ট
নেই ত?
---একমাত্র বিশুদ্ধ জলই সাইড ইফেক্ট নিরপেক্ষ।
লড়তে গেলে বলবানও আহত হয়,
সামান্য হলেও। সাইড ইফেক্ট
আক্রমণের আক্রোশ।
সেই
শুশুনি শাক, ধর্মপত্নীর অধিকারে বিশাখা স্বামীর বিছানায়
শুয়ে সে রাতে ধুন্দুমার: ছিঃ ছিঃ! বলিহারি তোমার রুচি! কামিনটাকেও ক্যাটক্যাট করে
গিলে খাচ্ছ! ব্রেসিয়ার জিন্দেগিতে দেখোনি?
শেষে ওই নোংরা বডিসে!
---ব্রেসিয়ারের ইতিহাস জানো? প্রাচীন গ্রিসে,
মিং রাজত্বকালে, তোমাদের হর্ষবর্ধনের রাজত্বে ... বাসবপুরাণ তো পড়েইছো, ধরো,
ধরো, তোমাদের অভিজ্ঞান শকুন্তলম্...
---পাণ্ডিত্য দেখাবে তোমার মুখ্খু ছাত্রীদের।
ছিঃ!
---পাণ্ডিত্য দেখিয়েই তোমরা ছাত্রীদের সব্বনাশ
করো...
---আমি সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের তরে...
---তুমি তো থ্রি এক্স দেখো। একটা মেয়ের শরীরে ওই
যৌন অঙ্গগুলিই আকর্ষণ, বাকি সব গোছা গোছা বাল!
---তোমার স্বার্থেই দেখা। বমি আসে, ছিঃ! কি করে রোজ দেখো? অতক্ষণ!
বিয়ের
পর পর তাঁর ঠোঁট ফুলতো : তুমি এখনো ভুলতে পারোনি? অর্থাৎ
স্যারের প্রাক্তন প্রেমিকা।
---ওকেই বিয়ে করতে পারতে!
---তাহলে তোমাকে পেতাম না যে!
---অত পিরিতি! তাহলে এখনো নাম করো যে?
---সে তো সানি লিওনেরও নাম করি।
---আমার চেয়ে সুন্দরী ছিল?
---তাই কখনো হয়!
---কী কী মাখতো?
---মনে হয় কিছুই মাখতো না, ঘামের গন্ধ উঠতো ভকভক্!
---যাঃ!
নতুন
স্কলার-ছাত্রী এলে গৃহীনি আড়নয়নে দেখে সরে যান, চলাচল
ও গতিবিধি না দেখেও, জানেন,
কতদূর কোন প্রদেশে তাঁর
সন্তরণ। পড়ন্ত বয়সের যন্ত্রণা নাকি পুরুষের বেশি---কোনো একটা সেক্স অ্যাপে পড়েছিলেন, নাকি,
পুরুষের সেক্স চিতাতেও লকলক
করে।
টিএমসি
অধ্যাপক ইউনিয়নের সম্পাদক প্রায়ই ঠোঁট ফোলান : আপনি স্যার লাল ঝান্ডাকে ভুলতে
পারছেন না। কথায় কথায় মার্ক্স মার্ক্স করেন কেন?
---সে ত আমি গান্ধিজির নামও করি।
---মার্কসবাদ কী গান্ধিবাদের চেয়েও ভালো ছিল?
---তাই কখনো হয়!
---মার্কবাদের কোনটা কোনটা ভালো মনে হয়?
---মার্ক্সবাদের কিছুই ভালো না।
---যাঃ!
কালিপাহাড়িতে ঘর বানানোর সব আয়োজন প্রায়
সাঙ্গ , ফ্যাকালটির এক হিতাকাঙ্ক্ষী অধ্যাপক বললেন, জায়গাটার খুব বদনাম। অশিক্ষিত চোর গুন্ডার ঢিপি। এ'রম লোকাল শিক্ষিত ভদ্রলোকদের বরদাস্ত করে না।
---ভদ্দরলোকদের কেউ বরদাস্ত করে না। লেপ্ট রাইট
কেও না।
সার
থেমে গেলেন জল মাপতে।
---জায়গাটা কি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের চেয়েও
খারাপ? এখানে যদি সার্ভিস লাইফ কাটিয়ে দিতে পারি
ওখানেও পারবো।
---বউদির কথাটা একটু ভাবুন। কথা বলার লোক পাবেন
না।
---শহরের লোকেরা কথা বলে?
---ল্যান্ডস্কেপটা একবার ভাবুন! ঘরের পেছনেই
পেন্টিং, যেন লতিয়ে বাড়ছে ছটপটে নদীটি। মেঘ ঝরবো না
ঝরবো না করেও ভাসতে ভাসতে একটু থেমে ঝরে যাচ্ছে কত নকশায়। আকাশ এই মেঘ আঁকড়ে
ধরলো ত অমনি মুড়ে নিলো নীলে। গাছগুলো ঘন সবুজে সাঁতার কেটে প্রতিদিন এগিয়ে আসছে।
আহা, কী মিষ্টি! প্লেটে রেখে কেটে খাওয়া যায় এমন
চাপ চাপ রোদ্দুর। সশব্দে,
ছবি ফুঁড়ে, ছিপছিপে ট্রেন মেঘআকাশজঙ্গলে সেঁধিয়ে হাপিস!
চাঁদ
সারারাত কিৎকিৎ খেলছে এমন তেপান্তর আশমান। গায়ে কাঁটাতোলা ভোরের ঠুরঠুরে হাওয়া।
মনে হয় সারাদিন রাত জেগে থাকি।
এসব
কথা কি বলা যায়? লোকে পাগল বলবে না? কিছুই মন খুলে কাকেও কিছুই বলার মত ধক্ নেই তাঁর সিনায়।
সংবিধানের সপ্তদশ অনুচ্ছেদটি তুলে দিলে ভয় ভয় ভাবটা কাটতো, জিভকে বিশ্বাস করা এ যুগে অসম্ভব। কেমন করে রাষ্ট্র
ব্যাকুল হয়ে ওঠে আধিপত্যের জন্য ড. সেন সহ সকল সৎ শিক্ষিত নাগরিকেরা জানেন।
কালিপাহাড়ির
মুসলিমরা বারাফ্ফতের জুলুস বার করলো সামনে একটি অতিকায় রাষ্ট্রীয় ঝান্ডা রেখে।
সাম্প্রদায়িকতা এনআরসি নোটবন্দি ডিএ মূল্যবৃদ্ধি তিনশ সাত ডিটেনশন ক্যাম্প ইরাণ
সমস্যা চিলিতে কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতা দখল হেনতেন বিষয় নিয়ে তিনি চিন্তাতুর
কিন্তু বহিঃপ্রকাশ খুব সাবধানী। রোমিলা থাপারের দিকে যদি আঙুল ওঠে, তিনি প্যাপলার কোন প্রফেসার!
মোদ্দা
কথা হেঁটেই ইউনিভার্সিটি যাওয়া যায় বলেই জায়গাটা তাঁর পছন্দ। টিএমসি যদ্দিন
পাওয়ারে থাকবে প্রমোশন ডিমোশন কিছু নিয়েও তিনি এই গেঁয়ো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
নড়তে পারবেন না।
সব
কাজের গৌরবময় রিজন্ প্রতিষ্ঠা করতে তিনিও চিরায়ত বুদ্ধিজীবীদের মতো হাসলেন, সে হাসির ধক্ বুঝে নিতে যেটুকু মেধা লাগে তার অভাবে, তাঁকে,
তাঁর সিদ্ধান্তকে, স্বাগত জানালো সবাই।
চলুন, ভালো বুঝলে আমরাও পিছু ধরবো।
বিশ্ববিদ্যালয়টি
নতুন বলে ছোকরাছুকরি অধ্যাপক অধ্যুসিত;গুঠবাজি বেশি, সবাই
'আমায় দেখ্ আমায় দেখ্' সুশিক্ষিত
এবং মহামূর্খ। জিন্দেগিতে প্রো-ভিসি হতে না পারারা অনায়াসে ভিসি, ভালো ফিগার সুদর্শন অধ্যাপিকারা ভিসির দুয়ারে হরবকত্
পড়ে।
জায়গাটা
রেন্ডিখানা হয়ে গেছে।
ড
সেন সম্ভবত বেশ্যা শব্দটাই বলেছিলেন।
স্যার-গৃহীনি
চিন্তিত হন।
---ওখানে ওসব বলোনি তো। তোমার পার্টির যা হাল
তোমার সার্ভিস লাইফে মনে হয় না পাওয়ারে আসবে। হতাশ ম্যাডাম, চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পিটিপিটি চায় : যাই বল, বেশ্যা শব্দটাই ভালো ছিল। ছোঁয়ানাড়া যেতো। কাঁচা জ্যান্ত
মাংসুটে ছিল। তোমাদের সিপিএমের দৌরাত্ম্যে,
মানুষকে আমরা সম্মান ফিরিয়ে
দিয়েছি, বাল দিয়েছে! আনন্দবাজার লিখলো কি সব 'যৌনকর্মী'
না কি, কেমন যেমন দশটা পাঁচটার চাকরি চাকরি লাগে! এটাকেই বলে
হেজেমনি, বুঝলে ক্যাডার?
লাভ-ম্যারেজের
এই এক ল্যাঠা, লাভারের মেধাকে উন্নত বলে স্বীকার করতে হবে
সবসময়, তবে না লাভ? নইলে
লহমায় লোকসান।
---কোনো মেয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেশ্যা হওয়া কি? সতীত্বের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেলেই কেউ বেশ্যা
হয়। বেশ্যা একটি অবস্থা,
সতীত্বেরই অধঃপতিত রূপ।
তোমাদের
ফ্যাকালটির মাগিটাকেই বরং যৌনকর্মী বলতে পারো। খুব সাজে না?
---তা সাজে,
বেশ্যার সান্ধ্যকালীন সাজ; ভিসির কাছে যাবার সময়।
---কি কি মাখে দেখে বলবে ত?
---কেন তুমিও কি ভিসির কাছে যাবে?
---আমার কি হ্যাজব্যান্ড নেই।
---হ্যাজব্যান্ড তো ওরও আছে।
আচমকা
বিশাখা গভীর ষড়যন্ত্র : তুমি মাগির বডিফাঁদে পড়োনি ত?
---আমি সে চিড়িয়া নই।
বিশাখা
আরো কি সব বলছে...
এসব
কূটতর্ক, তখনো ডিসটেম্পারের মলিন দাগ নতুন ঘরের
হাওয়াবাতাসে, উভয়েই জ্ঞানী, স্বচ্ছল
রুমগুলো কামদায়ী। বিকেলে আসা লুলাকে গৃহীনি বললেন, হোল
টাইমের একজন মেয়ে দেখো তো । গেরস্ত বাড়ি তালাবন্ধ, ঠিক
না। বিশ্বাসী...
---আমার বউকেই রাখ।
---রাখ শব্দটা অশ্লীল। তার থেকেই রাখনি। হিন্দিতে
বলে রাখেল। কেপ্ট... শব্দ কী ছিনাল!
টুনি
শুনেই ওয়াক্, বমি বমি অবস্থা।
---না বাবা!
---ভাল বেতন পাবি।
---শুনেই বমি আসছে...
কালিপাহাড়ি
জানলো একজন পাশকরা ডাক্তার এসেছে। আমজনতা খুশ্, মুখ
শুকালো ডা আজিম, ডা রাজভর, ডা
নিজামের; এরজন্য দায়ী ওই শিলালিপি, কোনো সাক্ষর শিলালিপিতে ড-এ পুটকি দেখে বাজারে সংবাদ
ছেড়েছিল, টুনির দোষ কি!
---না খাঁয়ে মরি আচ্ছা! আমি বাবা রক্তপুঁজ
কানিচুনিতুলাব্যান্ডেজ ফেকতে লারব!
---ওসব পরার বয়স আমার নেই। লুলার কাছে শুনে
ম্যাটাম, হাসলেন,
টোলফেলা হাসি : কি নাম বললে, টনটুনি?
টুনটুনাবার বয়স তোমার এখনো
আছে। সৎভাবে ভক্তিভরে কাজ করবে।
সেই
টুনি এখন ভক্তিমন্ত জনসংযোগ। বৃহস্পতিবার জোড় হাতের ম্যাডাম সামনে লক্ষ্মীর ঘটপট
:
স্বামীর অগ্রেতে খায় সিন্দুর না পরে।
গর্ভপাত নিত্যকর্ম কুবাক্য অধরে।।
লজ্জা আদি যত গুণ রমণী ভূষণ।
হৃদি হতে একে একে করিছে বর্জন।।
সতত উহারা মোরে জ্বালাতন করে।
চপলার প্রায় ফিরি তাই ঘরে ঘরে।।...
---কই বাবা, টুনি
অবাক হয়, লক্ষ্মী তো অচলা অনাচারের ডিপোয়!
সকাল
দশটায় ঠিক, লুলা এসে পৌঁছায় ড সেনের বসার ঘরে, তখন সোফা আঁকড়ে বসে আছেন এক যতোটা-পারা-যায় বাবু, সারা মনোরঞ্জন দুনিয়ার ফোকাশ নিয়ে যতদূর সম্ভব, নিশ্চয়ই,
তস্য বাবুটির মেয়ে। স্থানিক
অভিজ্ঞতায় উভয়েই লুলার মুখচেনা।
দরজায়
দাঁড়িয়ে লুলা, তার নয়ন জুড়ে ভরাট মেয়েটি। এত ঘনিষ্ঠ
নিবিড় ও দীর্ঘ দৃষ্টিপাতের চান্স,
জিন্দেগিতে না পাওয়া এর'ম্ মেয়েমাল,
তাপ্পর লুলার অপোজিটে, বাবুদের সঙ্গে উঠবোসে বহুকিছু ডেসপারেট ফাটাফাটি মিলে
যায়! পালিশ মারা এলইডি বালবের মতোন দুটি দুদ ঠেসাঠেসি,বুজবুজ করে উপচে উঠছে টপস ফাটিয়ে, সিলিপ খেয়ে দোপাট্টা পেটের গাভায়.. এই পথ্থম মাইরি এই
পথ্থম! মেয়েটিও নির্ভীক নির্বিকার;
সেও সাপ চেনে, এ সাপের খলবল নাই,
এ সাপের বিষ নাই, এ সাপের ফোঁস নাই,
ফনা নাই, নামেমাত্র সাপ।
বাবুটি
বলছেন, কালিপাহাড়ি ফেমাস হয়ে যাবে... ইংরাজিতে
লিখবেন, বলছেন!?
ড
সেন, এতক্ষণে,
হুটহাট মাথাগরম করে দেওয়া
মেয়েটিকে, মেয়েটিও, দেখাদেখি
হল সকালের কনেদেখা আলোয় : কী,
অ্যাডমিশন?
---না স্যার। ঠোটময় লিপস্টিক মাড়িয়ে পূর্ণ
বাক্যটি রীতিমতো রাঙা : তিনবছর আগেই গ্রাজুয়েট পাশ করেছি।
---ডিসটিংশন সার। খুব ইন্টেলিজেন্ট... বাবুটি
এগিয়ে বসেন।
---অ?
এভাবে
সাধারণত, এই পরীক্ষায় নম্বর বাড়ানো, রিসার্চ করতে চাওয়া,
সিএসসি হেনোতেনো আত্মসমর্পণে
মেয়েরা আসে। জটিল চোখে ড সেন ফাটাফাটিতে,
ততোধিক অগ্রসরমান ফাটাফাটি।
দুটি জয়চন্ডী পাহাড় হিলে গেলে যতটা লন্ডভন্ড হতে পারে রঘুনাথপুর, ততোধিক এলোমেলো সারের বসার ঘর। মেয়েটি বলে, স্যার আপনাদের ডিপার্টম্যান্টে একটা ভ্যকান্সি...
---বেশ। অ্যাপলাই করেছ?
---আপনি যদি স্যার---
---অ্যাপলাই কর ত।... একদিন এসো, দুপুরে।
---ডিপার্টম্যান্টে?
---আসতে পারো। এসব কাজ ঘরেই ভালো।
লুলা
জানে এর পরের দৃশ্যটি পর্দাজোড়া হয়। নেপথ্যে গা-গরম করা মিউজিক বাজে। ঘরের
দেয়াল ধরে ধরে দৃশ্যটি স্থির হয় কিছু প্রতীকে, গোটা
হল স্তব্ধ ও নির্বিকারে উত্তেজিত,
নায়কের সঙ্গে দেহ বদল হয়।
লুলাও বাধ্যত দর্শক হিসেবে অ্যাটাচ বাথরুমে যায়। প্যানের জলে ছন্-ন্-ন্ আওয়াজ। 'দি এন্ড'
হতে হতে লুলাকে একাধিক বার
টয়লেটে যেতে হবে। দেড়শ কোটি ভারতীয়ের মতো সেও মাঝে মাঝে গা গরম করে, হাত পা ছোঁড়ে,
সুখশয্যায় নিদ্রা যায়, কাটরিনা ক্যাফের শয্যাসঙ্গী হয়।
ড
সেন, একদার বামপন্থী সক্রিয়কর্মী অতএব চিন্তাতুর, এত এত অপচয়িত যৌবন!
গতকালই
কাগজে পড়েছেন, ইউনেস্কোর মূল্যায়ণ, ভারতের পঞ্চাশ শতাংশ ছেলেমেয়ের চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা নেই, তাই ভারতের একমাত্র চাকরি পাওয়ার রাস্তা নাকি ঘুষ।
উচ্চডিগ্রিধারী অযোগ্যদের ঘুষঘাসের দায়,
কে যে কীভাবে কীরূপে কী
মতাদর্শে নেয়, ইউনেস্কোর বাপের পক্ষেও জানা অসম্ভব।
লুলার
মাধ্যমে টুনি, এই এক সমস্যা ছোটোজায়গার, টুনির মাধ্যমে ফুলমণি, ফুলমনির
মাধ্যমে গৃহীনিরা, গৃহীনিদের মাধ্যমে বাবুরা এবং অনুক্রমে সারা
কালিপাহাড়ি জানলো, নতুন আসা লোকটা প্রফেসর না বাল, একটি ঘুষখোর! মাগিবাজ!!
তিনিও
চেয়েছিলেন বিপ্লব হোক, জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে, তা হবার নয়। তিনি চেয়েছিলেন সমস্ত মানুষ সসম্মানে বেঁচে
থাক,আজিম প্রেমজিদের দানদাক্ষিণ্যে তা হবার
নয়।তিনি চেয়েছিলেন সমস্ত বেকার নিজ যোগ্যতায় চাকরি পাক, কমরেডসিন্ডিকেটমন্ত্রিএমেলেগুলোর ভোটপ্রাণ জনসেবায় তা
হবার নয়। যৌবনেই বুঝেছিলেন মার্ক্স বলেছেন বলে কোনো মতাদর্শ বিশ্বাস করার মতো
গান্ডু আর অবশিষ্ট নেই, হয় বিশ্বাস করো, নয়তো ভাগো-র যুগে কট্টর সমর্থক মনোতোষ সেন জানেন, ওই সব ঢপের বুলিগুলিকে নিয়ে কখনো মাথা গরম করতে নেই।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যগুলির সাথে উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রায়োগিক সম্ভাবনা
খুঁজে নিয়ে তাকে প্রয়োগ করো। তাতে রাষ্ট্রের
উন্নতি হয়, ব্যক্তির উন্নতি হয়, মতাদর্শ যা চাইছে তাও রূপায়ণ হয়। সে বিপ্লবে নারীও ছিল, প্রিয়ভাবেই ছিল ।
সে-এক
শীতের সন্ধ্যা, গায়ে হালকাহলুদ সুতোর ছাপা হালকাচাদর ফুঁড়ে
জেঁকে বসেছে তন্বীশ্যামাশিখরদশনা। তাহার পক্ব বিম্বাধরোষ্ঠী মেদিনীপুর স্টেশনে, একাকী প্লাটফর্মে।
---এখানে?
সঙ্গের, ওরই হচ্ছে,
নিশ্চিত চাকরিপ্রার্থী , ড সেনকে অভিনন্দন জানিয়ে সেও যাবে উল্টো ট্রেনে, বিদায় নিলে,
তন্বীশ্যামা গভীর গভীরতর
দীর্ঘশ্বাসে জানায় : ইন্টারভিউ দিতে।
---কই দেখলাম না তো?
---দেখলেও হোত কি দাদা, আমার?
কী
কষ্ট অসহায়তা হয়ে যাচ্ছে নাকের ফুটোয়।
---তোমার তো রিসার্চ করা নেই?
---থাকলেও হোত কী?
চকিত
হরিণী নিম্ননাভী যতোটা উন্মুক্ত করা যায় প্লাটফর্মে, সেই স্টেশন,
সেই নিয়ন আলো, সেই দিকভ্রান্ত জনকোলাহলপূর্ণ সন্ধ্যায় প্রকৃতপ্রস্তাবে
নেট পেয়ে গেলো, ড সেন সে বছরের পেপার-সেটার। সারের অধীনে
গবেষণা, করতে করতেই অধ্যাপনা, গবেষণা সফলান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে স্যার, পিছুপিছু হৃদয়ের বোন। কিন্তু ড সেনের চেয়েও লম্বা হাতের
হোমোসেফিয়েন্স বদলাও রাজনীতিতে আবির্ভূত হবেই। ভিসির এখন হৃদয়ের বোনই পরামর্শদাতা।
হৃদয়ের
বোনই কী কম গসিপ করেছে, টুনিকে দোষ দিয়ে লাভ কি, সে তো নির্লোভ প্রচারক।
তবুও
হৃদয়ের বোন তৎসহ ভিসি, হারামি ভিসিটা বিদায় না হলে চেলাচামচাদের
লটরপটর চলবেই---এ সব বলতে ভাবতে শুনতে শোনাতে বিকেল সন্ধ্যা, সন্ধ্যা রাত।
সমভাবী
অধ্যাপকরা বললেন, আপনার সংগঠনকে কাজে লাগান, এত দুর্নীতি সহ্য হয়!
সর্বত্র
ভুরু কুঁচকানো দৃষ্টির জন্ম দেবেন ড সেন,
ভাবেননি। মরীয়া, যখন পিঠ ঠেকে যায় দেয়ালে, তাঁর
নিজেরই, একদা সক্রিয় কর্মী ছিলেন পার্টির, কাজ করতে করতেই জেনেছিলেন, কোনো
বিপ্লবই নেতার হাতে থাকে না;
রেড গার্ডও মাও-এর
নিয়ন্ত্রণে ছিল না, লেনিনের একচ্ছত্রে চলে নি সোভিয়েত; জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবও জ্যোতি বসুর হাতে নাই, সুমহান বিপ্লবে যে যেভাবে পারো খেপমারের যুগে তিনিও কলেজে
নামমাত্র কটাদিন কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ;
প্রবেশ করলেন পার্টিঅফিসে।
হা-হা জনশূন্য অফিসেও ব্যস্ত সেই নেতা বিপ্লব স্পন্দিত বুকে তাঁর সব কথা শুনে
বললেন, ইস্যুটাকে রাজ্য কমিটিতে তুলবেন। মামলা তো
লড়াই যায় হাইকোর্টে। সাবধান করলেন দায়িত্বশীল কমরেড, তবে আপনি খুব বেশি আসবেন না, ফোনও
করবেন না। সবদিকে নজর শালাদের!
খবর
না-আসা হপ্তাটেক পর মরীয়া আশাবাদী স্যার,
ফির, গেলেন একদার সেই শশব্যস্ত শুনশান অফিসে। নেতা দেখেই গদগদ :
আগামি সোমবার থেকে নিউজ হচ্ছে,
ধারাবাহিক।
---তাহলে গণশক্তির অর্ডার দিই।
---গণশক্তি না, আনন্দবাজার।
---আনন্দবাজার কবে থেকে পার্টির মুখপত্র হোল?
হায়
পিডিজি! হায় হরেকৃষ্ণ কোঙার!! হায় বিমান বসু!!! কত রাত অভূক্ত বিপ্লবে বৃথা
গোঙাইলে!
হতাশ
ড সেন পোস্ট ডক্টোরেটকেই নোহার আর্ক ধরলেন। হাতের কাছে জ্যান্ত লোকাল : ইললিগাল
মাইনস অ্যন্ড পলিটিক্স। আদর্শ উদ্দেশ্য একদেহে লীন।
এগারোটার
লোকাল ঢুকবো ঢুকবো সময়ে স্যারের মোটর সাইকেল ননিয়া নদী যেতে জঙ্গল, কিনারায় থামলো। একটি পাখি ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল। জঙ্গলের
মাথায় মাথায় ভাঙা ভাঙা ডিনামাইট। ভেতর দিয়ে লিকিরপিকির সাপচলা রাস্তা যৎকিঞ্চিৎ
বড়ো গাছের গায়ে গায়ে অপর্যাপ্ত হার্বসার্ব। তাতেও ফুল, তাতেও ফল। কাঁটাও। আগে আগে লুলা, পেছনে সার,
মধ্যিখানে বাতবাতেলা। মাথার ওপর
ডাল তুলে দাঁড়ালো লুলা---সার পেরোতেই ছেড়ে দেওয়া ডাল ন্-ন-্ন-্ন্ উপরনিচ, কুচরি রোদ হাওয়ায় ভাসে ; তাতেই
ড সেনের বডি ফুটো, টুসটুস জল কাটে।
---এখনই গলে গেলে হয় সার ---নদী করশ্ করতে
হবেক...
ব্যাগ
খুলে সিলমারা বোতল খুলে জল খান ড সেন : খাবি?
---না স্যার। অত পাতলা জল জিরুনগুঠুলিতে থিরাবেক
নাই---পয়সা দিয়া জিনিস ফালতু পিসাব হঁয়ে যাবেক!
বোতলটা
ঝোলায় রাখতে রাখতে ড সেনের মনে পড়ে গেল মার্কিন দেশের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির
সিও বলেছিলেন, প্রকৃতির সব কিছুই পয়সা দিয়ে কিনে নিতে হবে, ফিরিফন্ড বলে কিছু থাকবে না। আপসে পাওয়া জলহাওয়া রোদ
বৃষ্টি অর্থের বিনিময়ে লভ্য না হওয়া পর্যন্ত এসবের অপব্যবহার রোকা যাবে না।
নিছক বেঁচে থাকার জন্য কত টাকা খরচ হচ্ছে রোজ, তাতেই
হিসাব হবে সমাজটা কত সভ্য। প্রকৃতি-সভ্যতার প্রতিটি অবদান অর্থমূল্যে বিচার করতে
পারবে যেদিন পৃথিবী, আমরা সত্যিকারের কিমতি এবং সার্থক সভ্যতার
জন্ম দিতে পারব।নদীর ধারে বেগুনি ফুল নিয়ে নধর কলমিলতা এক মুঠো দশটাকা, দশটা ডগি কুলেখাড়ার দাম দশটাকা, ওতে রক্ত হয়। কত রক্ত, কত
দশটাকা নদীর কিনারায়! লুলা খপ্ করে সারের হাত ধরে নির্ঘাত পতন রোখে : লতপাত জঙ্গল
কি মিটাই যাচ্ছে সার? দেখে চল।
চোখ
তুলতেই আকাশসহ জলরং একটি জনমানবহীন কুঁড়ে একটি কুয়ো বাঁশেবাঁধা কপিকল তারপাশেই
নদীটি নদীতে সার সার রংবেরঙের মাস্তুল তোলা নৌকা; আবহজুড়ে
ছাগলছানার মি-মি-মি-মি তুলিতে আঁকা ডাক। আচমকা দূরে গোবরকুড়ানি ডান্ডা নিয়ে
আচমকা আসা গরুকে তাড়িয়েই অদৃশ্য ---প্রকৃতি লহমায় দৃশ্য।
---সিলিপ সার, পা
টিপে টিপে চল। হাত ধরে লুলা। যেন সুসভ্যতাকে পথ দেখাচ্ছে, জলে নামতেই পায়ে জড়ায় ডুবো পলিথিন ক্যারিব্যাগ।
---এই নদীতেও প্লাস্টিক, অত?
---আসানসোল থেকে পিঁধ্যাড়ে নামে যে সার।
ঘাঘরবুড়ির থানে দেখেছ, লাগবেক শীতের পাখিগুলা জাঁক কাটছে
জলে---সোবগুলাই প্লাসটিক।
হিসেব
করে দেখা গেছে, কোথাও যেন পড়েছিলেন, নরের চেয়ে নারীরা প্লাস্টিক ব্যবহার করে প্রায় দশগুণ; শহরের নারীরা একাই নিরানব্বই পার্সেন্ট।
শাড়িকাপড়জুতালিপস্টিককসমেটিককেয়ারফ্রি হেনতেন করে বছরে এক একটি নারীর
আন্তর্জাতিক হিসাবে গড়ে পঁচিশ মিটার পলিথিন লাগে। সব শিক্ষিত লোকের মতোই ড সেন
স্বজনপোষণ, স্বৈরতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, মৌলবাদী টেররিস্ট,
ঘুষ, এয়ারস্ট্রাইক,
যুদ্ধ, এনআরসি,
রামমন্দির ইত্যাদিপ্রভৃতির
জন্যে ভয়ানক চিন্তাতুর---জলমাটিজঙ্গল ঘিরে দূষণ নামক বিমূর্ত বিষয়টি ঘিরে আর
দশজন বাড়তি পাঁচ বছরের এক্সটেনশনে খুশি অধ্যাপকেরা যেমন। মাঝে মাঝে ডিএ নিয়ে
উষ্ণ হন কিন্তু আওয়াজ তোলেন না। জড়ানো প্লাস্টিকখণ্ড দেখে তিনি শিহরিত।
ডাঙায়
উঠে বোতলের বাকি জলটুকু খেয়ে নদীতে ছুঁড়ে দিতেই সেটি নৌকো, তলানির সামান্য জলের চাপে সামান্য কাত; নীল ঢাকনাটি মাস্তল---মৃদুমন্দ হাওয়ায় দোলে।
সভ্যতা
কেমন প্রকৃতি হয়ে গেল!
মুগ্ধ
ড সেন এখন বাল্যকালে।
---সার তুমিও সেই জলেই ফেকলে? শিক্ষিত লোকের লজ্জায় নাজুক ড সেন : একটা বোতলে আর কতটা
লোকসান লুলা? যা পলিউশন হবার হয়ে গেছে। লে চকলেট খা। আধট
মুখে পুরে মোড়কটা নদীতেই ফেলে দিলেন,
লে খা।
---নাই খাব। জিভটা ল্যাটল্যাট করে চকলেটে।
---প্রোটিন আছে।
লুলা
হঠাৎ হেসে উঠল।
---জান সার,
দামুদরের গাভায়, ই বছরের পৈলা দিন,
হেপি নিয়ার। লায়েন দিয়ে
মারতি- বলেরো---যত ডিজে তত লাচন তত বোতুল। দামি দারুর প্যাকিটগুলাও গাদা...এক শালা
এমন হেপিনিয়ার ...উঠার খেমতা নাই!...কি বতাব সার, ঢকঢকাই
মাল খাছেক সব শালা, মিয়ামরদ, আর
পানিতে বোতুল ফেঁকছে ভুকভুক! শালাদিকে খিঁচে ওলছুলা বাখান দিলম : মাদারচোদ! নদীতে
বোতুল ফেকছিস? কী গোঁসা! বলল, সেটাপ!
এখনই পুলিশ ডাকব। বললাম,
ডাক ক্যালার! ডাঁড়া, আমিই পুলিশ বুলাচ্ছি। মোবাইলে হাত দিতেই ভোঁসড়িবালারা কী
জেনটিলম্যান! বলল, একদুটা বোতলে কি ক্ষতি হয় ভাই? লাও এক ঢোঁক খাও... মাংস খাও... প্রোটিন বাড়াও...
---জান লুলা, আমাদের
গাঁয়ের পাশেও একটা নদী। ছোটো। কী ঢলোঢলো জল! হলুদ বাবলাফুলে ভরা দু'পাড়...কি জানি অমনি আছে কী না!
---বতুলে জল খাওয়া ইনসান সারা দুনিয়ায়।
সেই
প্লাস্টিক সেই বোতলের কথা। লুলা মহা ধুম।
---ধর কেন্নে চাঁদ উঠল, আমাদের দিমাক বিগড়াল। ঝপাং করে জলে ঝাঁপ। তারমধ্যেই ধরে
লাও ফূর্তি---তার মধ্যেই ধরে লাও মছলি পকড়লম, অমনি
পেটের ভিতর খিদার আঁতমচড়ানি...বউটা আমার সুরত দেখেই মাছমছলি হিঁচে ফেকে দিল :
খালভরা নর্দমার মছলি কে খাবেক?
শোচ, গাঙ্গুলি মাস্টার বলছিল, কিতাব
লেখে, নকি,
ননিয়ায় নৌকা চলত! কোন কবির
দাদু খাদান খুলতে নৌকা চালাই নকি কালিপাহাড়ি আসেছিল? বিশবাস হচ্ছে ?
ই নদীতে নৌকা চলতে পারে? মাস্টারটা প্যাঁদা।
---নারে,
মাস্টারমশাই ঠিকই বলেছেন।
সরু লিকপিক ননিয়ায় চোখ ফেলে
লুলা
উদাস বোধহয়। ঢঢঢ ঢঢঢ পাম্পের আওয়াজ। মেঘ ভেঙে ভেঙে ঝুরো হেভি আর্থ মুভিং-এর
দবকানিতে : তোমাদের সুখের জন্য দুনিয়া জহযাতে যাক, তোমাদের
ভালোর জন্য অত অত বোতল অত অত পলিথিন অত অত আবিষ্কার। নিঃশ্বাস লিয়াই কি বাঁচে
থাকা হে? আমরা ক'ঝঁড়া কয়লা চুরাই হে? ওসিপির চাঁয়েও বেশি?
হে বাবুরা??
হেভি
আর্থ মুভিং-এর আওয়াজ ড সেনকেও খোঁড়ে। কোল ইন্ডিয়ার নোটিফিকেশন ক্লাস্টার টেন, ক্লাস্টার টুয়েন্টির পিডিএফ ফাইল পড়ে বুঝে নিচ্ছেন ওভারবার্ডেনের
চাপে জলমাটিহাওয়াগাছগাছালিঘাস লুপ্ত হয়ে যাবে। অচিরেই। লক্ষ লক্ষ বছরের একটু
একটু করে গড়ে ওঠা মাটি! স্বর্ণশীর্ষ শষ্যক্ষেত্রের মাধুরী নিরাপত্তা আশ্রয়
অন্নসংস্থান বৃক্ষলতাপুষ্প সমৃদ্ধিতে মনোরমা তরুণী চিরযৌবনা জননী আজ পুত্রের
উত্থিত লিঙ্গের তলায়! তিনি ধর্ষণের মেমোয়ার্স পড়েছেন, এখন স্বচক্ষে দেখছেন। আপনা কয়লায় আপনি বৈরী, কয়লা শেষ হওয়াই এর মুক্তির দিশা।
১৯৯৩-এ
বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিকে প্রায় বিনা মূল্যে কয়লা ব্লক দেওয়া হল।গোয়েঙ্কা
সেই ভাগ্যবান, ভারতের প্রথম কয়লা ব্লক প্রাপক।
২০০৬-এ
ক্যাপটিভ মাইন্সে ১০০% বিদেশি পুঁজিবিনিয়োগ ছাড়পত্র পেল।
২০১০-
এ অন্যান্য খনিজের মতো কয়লাকেও নিলাম চড়ানোর ছাড়পত্র
তারপর
তো লুটপাট, তারপর তো বুর্জোয়া শ্রেণীর স্বার্থ। কিন্তু
সিপিএম? অত অত এমপি, সংসদে
কী বিপ্লব মারালো? ড সেন অভ্যুদয়ের জন্ম দিতে পয়দা হয় নি। দেশহিতৈষী
পড়া তাঁর সমাজতান্ত্রিক মেধায় উত্তরহীন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে অনেক।
শ্বেতসন্ত্রাসের দিকে আত্মসমর্পণ করতে যাওয়া ব্ল্যাক, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের দিকে ট্রেনভর্তি ইহুদি জরুরি
অবস্থার সময় পালিয়ে আসা আন্ডারগ্রাউন্ডবাসী কমিউনিস্ট, মার্ক্সবাদের সুফল ভোগ করতে আসা ধান্দাবাজ, পৃথিবীকে সুজলাং সুফলাং করতে চাওয়া পরিবেশ রক্ষক, জিডিপি বাড়াতে ধনেধান্যে ফুলে ওঠা আদানিআম্বানি, যথা পূর্বং তথা পরং প্রলেতারিয়েত, গুণ্ডা-বাটপাড় -সিন্ডিকেটপ্রেমী ভাইরা, মুসলমানের হাত থেকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের বাঁচাতে
ধর্মাত্মারা---এত সব নিয়ে পৃথিবীর ২.৩ শতাংশ আয়তনের ভারতবর্ষ; তার অঙ্গরাজ্য পশ্চিম বঙ্গ, তার
একটি জেলা সবে-খণ্ডিত পশ্চিম বর্ধমান,
তস্য থানা উত্তর-দক্ষিণ
আসানসোল-রানিগঞ্জ-জামুড়িয়া ইত্যাদির ভূতলে কয়লা পৃথিবীর আবর্তন রুখে দিচ্ছে
জেনেও বনজঙ্গলবস্তিনদীশহর বিধ্বংসী শিল্পপতিদের ও ওসিপি-খাদানওলাদের পদাঙ্কেই
লুলারাও ইতিহাস, সংসদ কিনে নেবার মতো পুঁজি না থাকলেও তারাই সে
ইতিহাসের নায়ক। এইসব বৃহৎ নাতি ক্ষুদ্র ঝুটঝামেলার ভেতর দিয়েই লুলারা বেঁচে আছে, নিরন্তর বেঁচেবর্তে আছে, তিনি
বুঝছেন। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ইন্ডিয়া ৯৬৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা ব্যবহার করেছে, ৬০৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লার উৎপাদন করেছে কোল ইন্ডিয়া, তাহলে লুলাদের উৎপাদনটা কোথায় গেল? নাকি চুলা ধরানো,
চিতা জ্বালানোকে হিসাবে নেয়
নি?
সত্য
বলা এক উচ্চাঙ্গের ঢপ, মিথ্যা বলাও এক উচ্চাঙ্গের স্ট্রাগল
ভোটতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় পরিসরে।
লুলা
বলল, সার,
হাঁই দেখ ইনকেলাইন।
লুলার
দেখানো আঙুল ঠিক ১৯১৪, ইলোরা আবিষ্কারটি ; ঝোপজঙ্গলের গুহামুখ। পেছনে পেছনে হান্টর স্মিথ, সামনে কাউবয়। সাহেব কি আবিষ্কারের উত্তেজনায় হনহন করে
ভেতরে ঢুকেছিলেন? নাকি কাউবয়ই প্রথমে ঢোকে? সুস্থসুন্দর রিটার্নের পর সন্দেহহীন ঢোকেন গুহায়। ড সেন, কিসে কম সাহেব?
লুলাকে বললেন, ভেতরে যাওয়া যায় না?
---কেনে যাবেক নাই, কত
লোক যায়। দেখ গা গাদাগুচ্ছেক লোক কয়লা রেজিং করছে। ঘুটাংঘুটাং শুনতে পাছ নাই?
কান
পেতে শুনলেন ড সেন : মরে?
---মরবার লাগেই ত জীবন? জীবন কি সোনায় বাঁধাই রাখার?
---খাদানে মরলে দুলাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য
ইসিএল, জানিস?
---সচ্?
তবে অনেক টাকা পাবেক আমাদের
মহল্লা! আগে বল নাই কেনে?
হঠাৎ
উল্লসিত কিম্বা উৎসাহিত লুলা,
হঠাৎ-ই চুপচাপ, হঠাৎ-ই উদাস : সার এই বাতটা আর বল না, বুত্তালে?
---কেন?
কেন?
---বাঁচার জন্য মরি ঠিক আছে। মরার জন্য মরতে বল
না। দুলাখ টাকা শুনলে কত্ত লোক জলজিয়ন্ত মরে দিবেক। উট চিটিং মরা!
লাশ
না পাওয়া গেলে মৃত্যুটাকে মুছে ফেলা কতই না সোজা , কল্যাণকামী
রাষ্ট্রের উদ্ভাবন ইসিএল,সে পথেই কল্যাণ করছে : তোমরা ন্যায্য পাওনা
নেবে না? এটা আইন। ইসিএল দিতে বাধ্য।
স্বেচ্ছা-শোষণের
নতুন তত্ত্ব শ্রমবিশ্বে। সাপেও তো নিজের ল্যাজ নিজে কামড়ায়। শ্রমের এই দিকটি
নিয়ে লেনিনের কোনো তত্ত্ব নাই।
ডাসক্যাপিটলের
ফোকাস অত গহনে পড়তে পারে নি,
ভবিষ্যৎ একটি আঁধার।
মোবাইল
ক্যামেরা ঠিক করে লুলাকে ধরান ড সেন : যা ছবি নিয়ে আয় ভেতরের। বাইরের গোটা কয়েক
ছবি নিয়ে বললেন, হাঁ দেখ,
মাঝটা টিপবি। দেখবি আলো
জ্বলবে...ডিটেলটা তোর কাছে শুনে নেব।
---যদি কয়লা চাঙড় খসে? মরে যাই?
নির্বাক
ড সেন । তা বটে।
---মহত্তম কাজের জন্য মরবি।
---তুমার মোবাইলটা ত যাবেক?
---মরলে দুলাখ পাবি।
---কেউ ত পায় নাই।
---এবার পাবি।
আনন্দে
উল্লসিত মুণ্ডহীন লুলা, আমৃত্যু আজীবন অমর, শ্রীলালমোহন বাউরি।
শ্রমিক
নেতা হারাধন রায় কয়লাখনিতে ধস আগুন পরিবেশ দূষণ নিয়ে ১৯৯৭-এ প্রথম জনস্বার্থ
মামলা করেন, ২০০৩-এ রায় বেরয়, ক্ষতির কিমত চোকাতে হবে ইসিএলকে। ২০০৯-এ মাস্টার প্ল্যান, ৩৩,১৯৬ টি পরিবার চিহ্নিত; ২৬১,০১০ কোটি টাকা বরাদ্দ। ২০২০-তেও কোনো পরিবার
একটি ফুটা টিকলিও পায় নি। রানিগঞ্জ-আসানসোলে ধস, আগুন,খনিগর্ভে জীবনহানি সম্পত্তি ক্ষয় রোজের কিসসা, ড সেন জানেন এসব।তার থিসিসে একটি বিস্তারিত অধ্যায় এটি ; নোট,
সারণী, রেজুলেশন,
মিনিটস, ইউনিয়ন সবকিছুর হার্ডকপি ফটো তাঁর সংগ্রহে, সেগুলো তাঁর পাণ্ডিত্যের জৌলুস বাড়াবে।
ভারতবর্ষের
প্রতিটি দিনই মিথ্যে দিবস।
No comments:
Post a Comment