আমরা 'ব্লগবুক'
বিভাগে হাজির করি কোনো ব্লগজিন বা ওয়েবজিনের
মননশীল ভাবনাচিন্তাকে তথা তাদের সম্পাদকীয়কে। এ
দফার উপস্থাপনায় রইলো শিলিগুড়ির ‘চৌকাঠ’
পত্রিকার জানুয়ারি ২০২১ সংখ্যার সম্পাদকীয়টি। পত্রিকাটির সম্পাদক মলয় মজুমদার।
আবারো
মলয়
মজুমদার (সম্পাদকীয়,
ব্লগজিন ‘চৌকাঠ’ জানুয়ারি
২০২১ সংখ্যা, শিলিগুড়ি)
কিছুটা
বিচ্ছিন্ন এই আকাশ, চরাচর। সব মানুষের কাছ থেকে হয়তো অনেক কিছু
শোনার আছে। কিন্তু সেই শোনার সুযোগগুলো কেমন যেন বিদীর্ণতার মধ্যে দৈন্য প্রকাশিত
হয় জীবনের কিছু কিছু কাব্য অথবা কাব্য নয়। কাব্যের একটা অদ্ভুত বিন্যাস থাকে, কিন্তু জীবনের বিন্যাস সেই রকম গোছানো হয়ে ওঠেনা কখনো। আর
হয়ে ওঠেনা বলেই কিছু কিছু মৃত্যু পাহাড়ের মতো ভারী হয়ে এসে বসে বুকের মধ্যে। কোন
সামঞ্জস্য খুঁজে পায় না। না পেতে গিয়েই কেমন সব কিছু কাব্যহীন হয়ে পড়ে। মাথা ভারী
হয়। বুকের চিনচিন ব্যথা মাথার মধ্যে এসে কথা বলে, না
নতুন কোন শব্দ নয়। সেই পুরানো শব্দ। সেই পুরানো বিচিত্র কথপোকথন। শুধু মিথ্যের
ঝুলিটা আরো বেশি শব্দকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। আরো বেশি ভাঁওতা, আরো বেশি ঠকানো,
আরো বেশি আগ্রাসী, আরো বেশি ধর্মীয় বোধের বিকাশ অথবা সন্ত্রাস। বিকশিত ফুলদের
বার বার একই পদ্ধতিতে চেপে মেরে ফেলার সেই পুরানো অভ্যাস। জানিনা কারো দম-বন্ধ হয়
কিনা। জানিনা কারো সেই দম-বন্ধ ঘরের মধ্যে তিলতিল করে মিথ্যাকে বহন করে নিয়ে যেতে
যেতে কোথায় গিয়ে দাঁড়ানো যাবে,
জানা নেই। জানা নেই মানুষের
অতিরিক্ত ক্ষুধার কাছে, কতটা নিঃস্ব হয়ে নগ্নতার সামনে নিজেকে দাঁড়া
করাতে হবে, কে জানে!
তুমি নগ্নতা দেখতে পাও?
না।
তুমি ক্ষয় দেখতে পাও?
না।
তুমি জন্ম দেখতে পাও?
না। আমি ধর্মের মধ্যে জন্মের বীজ বহন করতে শিখেছি।
কিভাবে শিখলে? কোন পরাক্রান্ত স্বপ্নের সাথে নিজে জড়িয়ে ফেলেছো?
স্বপ্ন নয়। কঠোর বাস্তবতা। ধর্মীয় বীজ আমাকে বহন করেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।
তোমার ক্ষয় হয় তুমি সেটা দেখোনি কখনো?
না, আমার ক্ষয় নেই। মন্দিরের শিখা আমার ক্ষয় রোধ করে।
তোমার প্রতিপক্ষ কে?
আমার বিপরীত ধর্ম।
আর ক্ষুধা?
ক্ষুধার
থেকে বাঁচতেই তো ধর্মকে গ্রহণ করেছি।
আজ
অস্তিত্ব শুধু পুড়ছে না। ছাই হয়ে নগ্ন নৃত্য করছে আমাদের চারিদিকে। আর আমরা বিকাশের আগুনে গা ভাসিয়ে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আরো
একটা শতাব্দীর দিকে। ‘সাত লক্ষ বছর আগে আমরা তো সবাই পাগল ছিলাম’ - আজ কি আছি? পাগলামীর অন্ধকার আমাদের আরো বেশি নিয়ন্ত্রণহীন করে তুলেছে।
বেলুনের মতো ফাঁকা বাতাসের মধ্যে খাচ্ছি ডিগবাজী। কেউ মরছে। কেউ হা হা হা করে
শয়তানের হাসিতে বিষাক্ত করে তুলছে আমাদের বেঁচে থাকা। এও যেন এক পরিহাস! এক
বিপর্যয়। হাহাকার। ক্ষুধার সাথে নিঙড়ে নিচ্ছে আমাদের ঘাম-রক্ত-প্রেম। বিনিময়ে শরীর।
সামাজিক বাস্তবতা ধীরে ধীরে অসামাজিক জীবনের দিকে ধাবিত হচ্ছে প্রতিদিন। কত সহজ
মানুষের জীবন। কোন কান্নার কোন গান আর লেখে না কেউ। শুধু অচেনা বাস্তবতার মধ্যে
নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে চায়। শুধুই লুকোচুরি খেলা। এপাশে ওপাশে লাশের উপর শুরু হয়
নাঙ্গা নাচ। সব কিছু - মানে সব কিছুকেই যেন এককেন্দ্রিক জীবন ধারণের জন্যে ঘাড় ধরে
বলে দেওয়া, এটাই পথ। হয় থাকো অথবা কেটে পড়ো। নেই কোন
তৃতীয় অভিধান। কাব্যের বাস্তবতার সাথে জীবনের বাস্তবতার দূরত্ব সব সময় ছিল। আজো
আছে। কিন্তু সেই বাস্তবতার মধ্যে বেঁচে থাকার মিথ্যাকে ধরা যেতো। এখন সেই মিথ্যা
সত্যেই নগ্নতা নিয়ে খানখান করে দিচ্ছে সময়।
একটা
সময় মনে হতো মানুষ যতো বড় হতে থাকে ততো যেন সে একা থেকে একা হয়ে পড়ে। কিন্তু সেই
একাকীত্বের আজ কেমন যেন সমষ্টিগত রূপ নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে কর্পোরেট সভ্যতার
বাণিজ্যিক ব্যবহারে। ভাবনাগুলো গভীরতা পাবার আগেই আরো একটা ভাবনা। আরো একটা
সমস্যা। আর সেটা পার হতে না হতেই আরো একটা বিষয় টুঁটি চেপে ধরে বলে, এই নে। এটাই এখন তোর বেঁচে থাকার যাপন-মন্ত্র।
বেলুনের মতো ফাঁকা বাতাসের মধ্যে খাচ্ছি ডিগবাজী .. মনের মতো উদাহরন .. দারুন বিশ্লেষন।
ReplyDelete